Lalita Prasad Thakur's স্বীয় শ্রীসিদ্ধ-ভজন-প্রণালী
শ্রীগোদ্রুমচন্দ্রায় নমঃ
An abridged version of this document in Prabhu's handwriting. |
অকিঞ্চন ললিতাপ্রসাদঠাকুরের
স্বীয় শ্রীসিদ্ধভজনপ্রণালী
(রাগানুগা)
স্ব বা স্বীয় সিদ্ধ পরিচয়
ভকতিবিনোদ শিক্ষা ইহাই আমার দীক্ষা
ইহাতেই নিজাভীষ্ট লই
গুরু পদ হৃদে ধরি অনন্য শরণে বরি
ভজন আনন্দে সদা হই ।1
জড় মায়া যাহা হয় চিদে নাহি মিশ খায়
পঞ্চ ভূতে রক্তমাংসাতেই
অতি হেয় তত্ত্ব হয় জন্ম মৃত্যু জানি তায়
অবিনশী আত্মদেহ লই ।2
আত্মার সন্ধান লই জড়দেহ ভুলে যাই
আত্ম দেহ মানসেই বরি
আত্মভাব কৃষ্ণোন্মুখী তাহে হই চিরসুখী
গোপীদেহ মনে বনে ধরি ।3
আমার স্বরূপ যাহা আত্মাবস্থা হয় তাহা
জীবাত্মাই নিত্য কৃষ্ণদাস
অনিত্য অসত্য ত্যজি নিত্য ও সত্যেতে মজি
চিদ্ভাব করি সুপ্রকাশ ।4
আমার চেতন যাহা আচ্ছাদিত হয় তাহা
চেতন উন্মুক্ত আমি করি
চেতনেই চিদ্ পাই সত্য ধরি সদে রই
তাহাতে আনন্দ লাভ ধরি ।5
সত্য সৎ চিৎ ধরি তাহাতে আশ্রয় করি
আত্মার আনন্দ লাভ করা
জীবাত্মার কার্য্য হয় তাহা ভুলা ভাল নয়
গৌরের শিক্ষাতে এই ধারা ।6
গোপীভাবামৃত সিন্ধু আস্বাদিতে এক বিন্দু
লোভে বিধি ছাড়িতে অপার
অনাসক্ত আচরণে থাকি গৃহে কিম্বা বনে
লোকমধ্যে করি লোকাচার ।7
রাগানুগা ভক্তসঙ্গে শ্রীযুগল ভজন রঙ্গে
তদুদিত গুরুর কৃপায়
শরীরে সাধক মূর্ত্তি উজ্জ্বল রসের ক্ষণি
সদা মম হউক হিয়ায় ।8
সাধিতে উজ্জ্বল রস আছে ভাব একাদশ
সম্বন্ধ বয়স নাম রূপ
যূথ বেশ আজ্ঞা বাস সেবা পরাকাষ্ঠাশ্বাস
পাল্যদাসী এই অপরূপ ।9
(হরিনামচিন্তামণি 15.58)
মম সিদ্ধ ভাব যাহা গুরু আজ্ঞা কৈল তাহা
সেব্য সেবা সম্বন্ধ আমার
রাধাকৃষ্ণ ব্রজ বনে সেব্যতত্ত্ব এক মনে
নিত্য সেবা আমার আচার ।10
শুদ্ধভাব মনে এনে সাড়ে বার বর্ষ গুণে
বয়স আমার হয় জ্ঞান
নিত্য দেহ সিদ্ধ সদা হ্রাস বৃদ্ধি নাহি কদা
সদা তাহে কাল বর্ত্তমান ।11
নিত্য দেহে আমি যেই ব্রজে নিত্য দাসী সেই
নাম মম শ্রীলতা মঞ্জরী
এ দেহের নাম সব জড় ধর্ম সমুদ্ভব
অনিত্য দেহান্তে যায় মরি ।12
শুদ্ধ তপ্ত কাঞ্চনাভ শুদ্ধ সত্ত্ব সুবৈভব
যাহে আমি ত্রৈলোক্য মোহিনী
যূথেশ্বরী অনুরূপা রূপ মম রস কূপা
যাহে আমি কৃষ্ণ বিনোদিনী ।13
যূথেশ্বরী শ্রীললিতা সর্ব্ব গুণে সুললিতা
শ্রীরাধার নিত্য সহচরী
আমি নিত্য তাঁর গণে তদাজ্ঞা পরিপালনে
থাকি আমি তাঁহার কিঙ্করী ।14
তারাবলী পরিবেষ বসন ভূষণ শ্রেয়
মম সঙ্গে সদা শোভা পায়
মম দেহ অনুরূপা বেশ মম অপরূপা
যাহে নন্দসুত মন ধায় ।15
যূথেশ্বরী আজ্ঞামতে রাধাকৃষ্ণ সেবাব্রতে
রহি সদা পরম আনন্দে
যূথেশ্বরী গুরু মম বিনা তৎ প্রসাদ ক্রম
গতি কভু নহে কৃষ্ণানন্দে ।16
যাবটে আমার ঘর কোন গোপবংশধর
গ্রহণ করিল মম পাণি
অনঙ্গ সুখদ কুঞ্জে ললিতার কৃপাপুঞ্জে
শ্রীঅনঙ্গমঞ্জরী সঙ্গিনী ॥17
যুগল সেবনেশ্বরী ললিতা করুণা করি
ব্যজনের সেবা দিল ধরে
চামর লইয়া করে পরম আনন্দ ভরে
সেবা সুখ ভুঞ্জি কুঞ্জান্তরে ।18
সেবা বলে সেই রূপ রাধাকৃষ্ণ সখী রূপ
পেল রূপ মঞ্জরী প্রভৃতি
হয়ে সখী অনুগামী অদ্যই লভিব আমি
রাধাকৃষ্ণ নিত্য সেবা রীতি ।19
এ মত ভাব লয়ে পরাকাষ্ঠা বলি তারে
ভাব জানি যুগল সেবনে
সেই পরাকাষ্ঠা বলে সখীর অনুরূপ চলে
যুগল ভজিব ব্রজবনে ।20
পাল্যদাসী ললিতার আপনাকে জানি সার
বৈসি তাঁর শ্রীকুঞ্জ মন্দিরে
তাঁহার আবেশ মত সেবাকার্য্যে রহিয়াত
পরিচর্য্যা পাইব সত্বরে ।21
তাঁহার আদেশ যত এ লতা মঞ্জরী তত
কমল মঞ্জরী পদে থাকি
পালিছে উত্তম ভাবে শিখিয়া যোগ্যতা লাভে
অষ্টকাল সেবাব্রতে ঝুকি ।22
তাঁহাদের সাথে রয়ে রাধাকৃষ্ণ সেবা লয়ে
তাঁদের অনুগ ভাব লই
নিজেকে এরূপ ধরে জড়মায়া পরিহরে
রাধাকৃষ্ণ সেবা ধরি রই ।23
মোর গুরু যেই দীক্ষা দিয়াছিল মন্ত্র ভিক্ষা
সেই মন্ত্র আদরে বরিব
আর তাহা ফুটাইতে ভকতিবিনোদ মতে
যত্ন করি সদাই যুঝিব ।24
এই একাদশ ভাব সাধনে করি প্রভাব
সাধক জীবনে পঞ্চ দশা
লাভ হয় সুনিশ্চয় শ্রবণে বরণে তায়
স্মরণে আপনে করি আশা ।25
সম্পত্তিতে বস্তু সিদ্ধি স্বরূপেই হয় বৃদ্ধি
সাধন সিদ্ধার সেই কালে
ইহাই উজ্জ্বল রস ব্রজ ভাবে করে বশ
পূর্ণানন্দে নামানন্দ বলে ।26
কাম কৃষ্ণপ্রীতে গুণ ধরিব আমার মন
স্থির ভাবে রহি সর্ব্ব ক্ষণ
জানি মায়া জড় ভাব কেবল অনর্থ সব
সু আশ্রয় করি ব্রজ বন ।27
শ্রীমতীর বাম্য ভাব খণ্ডিতার যে স্বভাব
তাহা হয় অতি গোপনীয়
রাধারাণী যূথে রয়ে ললিতার গণ পেয়ে
হয় সব অনুভবনীয় ।28
চিদাবস্থা চিদ্বৃত্তি সকলিত তবে
আমারিত নিজ সত্ত্ব সর্ব্বক্ষণ হবে ।29
মঞ্জরীর ভাবে আমি রব সর্ব্বকাল
সেব্য ও সেবক ভাব সম্বন্ধ প্রবল ।30
এ জগতে যতদিন রহিব প্রকট
অনাসক্ত ভাব লয়ে হব নিষ্কপট ।31
পঞ্চ দশা যাহে আমি করিব সাধন
তাহা ইথে ক্রম ধরি সুন্দর বর্ণন ।32
কমল মঞ্জরী গুরু বড় দয়া করে
দিল এই ক্রম ব্যাখ্যা নিজ গণে ধরে ।33
সিদ্ধ ভাব যাহাদের নাহি জানা আছে
খুব সাবধানে থাকি তাহাদের কাছে ।34
সিদ্ধ ভাব সাবধানে ব্যক্ত আমি করি
মনে বনে সিদ্ধ ভাব সুভজনে ধরি ॥35
অথ শ্রবণ দশা
নিজাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শুদ্ধভাবুক যে জন ।
ভাবমার্গে গুরুদেব সেই মহাজন ॥৬১॥ 36
তাঙ্হার শ্রীমুখে ভাবতত্ত্বের শ্রবণ ।
হইলে শ্রবণদশা হয় প্রকটন ॥৬২॥ 37
ভাবতত্ত্ব দ্বিপ্রকার করিবে বিচার ।
নিজ একাদশ তত্ত্ব কৃষ্ণলীলা আর ॥৬৩॥ 38
রাধাকৃষ্ণ অষ্টকাল যেই লীলা করে ।
তাহার শ্রবণে লোভ হয় অতঃ পরে ॥৬৪॥ 39
লোভ হইতে গুরুপদে জিজ্ঞাসা উদয় ।
কেমনে পাইব লীলা কহ মহাশয় ॥৬৫॥ 40
গুরুদেব কৃপা করি করিবে বর্ণন ।
লীলাতত্ত্বে একাদশ ভাবসঙ্ঘটন ॥৬৬॥ 41
প্রসন্ন হইয়া প্রভু করিবে আদেশ ।
এই ভাবে লীলা মাঝে করহ প্রবেশ ॥৬৭॥ 42
(হরিনামচিন্তামণি 15.61-67)
আমি তব প্রতি সত্য হইব সদয়
অচিরে লভিবে সিদ্ধি যুগল লীলায় ॥43
অথ বরণ দশা
শুদ্ধ রূপে সিদ্ধ ভাব করিয়া শ্রবণ ।
সেই ভাব স্বীয় চিত্তে করিবে বরণ ॥৬৮॥ 44
বরণ কালেতে নিজ রুচি বিচারিয়া ।
গুরুপদে জানাইবে সরল হইয়া ॥৬৯॥ 45
প্রভু তুমি কৃপা করি যেই পরিচয় ।
দিলে মোরে তাহে মোর পূর্ণ রুচি হয় ॥৭০॥ 46
স্বভাবতঃ মোর এই ভাবে আছে রুচি ।
অতএব আজ্ঞা শিরে ধরি হয়ে শুচি ॥৭১॥ 47
রুচি যদি নহে তবে অকপট মনে ।
নিবেদিবে নিজরুচি শ্রীগুরুচরণে ॥৭২॥ 48
বিচারিয়া গুরুদেব দিবে অন্যভাব ।
তাহে রুচি হইলে প্রকাশিবে নিজভাব ॥৭৩॥ 49
এই রূপে গুরু শিষ্যে সংবাদ ঘটনে ।
নিজসিদ্ধভাব স্থির হইবে সেই ক্ষণে ॥৭৪॥ 50
আমি গুরুপদে পড়ি করিব মিনতি ।
মাগিব ভাবের সিদ্ধি করিয়া কাকুতি ॥৭৫॥ 51
কৃপা করি গুরুদেব করিবে আদেশ ।
আমি সেই ভাবে তবে করিব প্রবেশ ॥৭৬॥ 52
শ্রীগুরুচরণে পড়ি বলিব তখন ।
তবাদিষ্ট ভাব আমি করিনু বরণ ॥৭৭॥ 53
এ ভাব কখন আমি না ছাড়িব আর ।
জীবনে মরণে এই সঙ্গী যে আমার ॥৭৮॥ 54
(হরিনামচিন্তামণি 15.68-78)
অথ স্মরণ দশা
নিজ সিদ্ধ একাদশ ভাবে ব্রতী হয়ে ।
স্মরিবে সুদৃঢ়চিত্তে নিজভাবচয়ে ॥৭৯॥ 55
স্মরণে বিচার এক আছে ত সুন্দর ।
স্মরণ আপন যোগ্য কর নিরন্তর ॥৮০॥ 56
অযোগ্য স্মরণ যদি আপনার হয় ।
বহু যুগ সাধিলেও সিদ্ধ কভু নয় ॥৮১॥ 57
আপন সাধনে স্মৃতি যবে হয় ব্রতী ।
অচিরে আপনদশা হয় শুদ্ধ অতি ॥৮২॥ 58
নিজ শুদ্ধভাবের যে নিরন্তর স্মৃতি ।
তাহে দূর হয় শীঘ্র জড়বদ্ধমতি ॥৮৩॥ 59
জড়বদ্ধ জীব ভুলি’ নিজ সিদ্ধসত্ত্ব ।
জড় অভিমানে হয় জড়দেহে মত্ত ॥৮৪॥ 60
তবে যদি কৃষ্ণলীলা করিয়া শ্রবণ ।
লোভ হয় পাইবারে নিজ সিদ্ধধন ॥৮৫॥ 61
তবে ভাবতত্ত্বস্মৃতি অনুক্ষণ করে ।
ভাব যত বাড়ে তার ভ্রান্তি তত হরে ॥৮৬॥ 62
স্মরণ দ্বিবিধ বৈধ রাগানুগ আর ।
রাগানুগা স্মৃতি যুক্তিশাস্ত্র হৈতে পার ॥৮৭॥ 63
মাধুর্য্যে আকৃষ্ট হয়ে যে কালে স্মরণ ।
অচিরাতে প্রাপ্ত হয় দশা ভাবাপন ॥৮৮॥ 64
বৈধভক্ত স্মৃতিকালে সদা বিচারয় ।
অনুকূল যুক্তিশাস্ত্র যখন যা হয় ॥৮৯॥ 65
ভাবাপনে হয় ভাব আবির্ভাবকালে ।
শাস্ত্রযুক্তি ছাড়ে তবে জানিয়া জঞ্জালে ॥৯০॥ 66
শ্রদ্ধা নিষ্ঠা রুচ্য্আসক্তিক্রমে যেই ভাব ।
আপন সময়ে তাহা হয় আবির্ভাব ॥৯১॥ 67
ভাবাপনে রাগানুগা বৈধভক্ত ভেদ ।
নাহি থাকে কোন মতে গায় সর্ব্ব বেদ ॥৯২॥ 68
(হরিনামচিন্তামণি 15.79-92)
রাগানুগা ভক্তি স্থান তোমার হৃদয় ।
শাস্ত্র যুক্তি কভু নহে তোমার আশ্রয় ॥ 69
মাধুর্য্য লোভেই তুমি সেব শ্রীযুগল ।
শ্রীগুরু গৌরাঙ্গ স্মৃতি করিয়া প্রবল ॥ 70
তত্ত্ব গুরু ধ্যান করি স্বকীয় মণ্ডলে
স্বরূপ শ্রীরূপ রঘু প্রভৃতি সকলে ॥71
বেষ্টিত শ্রীগৌরচন্দ্রে ভাব অষ্টকাল ।
তাহে সেব রাধাকৃষ্ণ চরিত রসাল ॥72
নিজের নির্দিষ্ট সেবা কর অনুষ্ঠান ।
যূথেশ্বরী আজ্ঞা শিরে করিয়া ধারণ ।73
সেবা করি কাঁদ সদা আকূতি করিয়া ।
যাহে ভাবাপন শীঘ্র আসিবে ধাইয়া ॥74
অথ ভাবাপন দশা
যত দিন স্থূল লিঙ্গে করি অভিমান
করিব স্মরণ ক্রিয়া ভজন বিধান ।75
তত দিন ভাবাপন নাহি হবে সিদ্ধ
স্মরণ মনন কবে মায়া জড় বিদ্ধ ।76
সেই কালে নিজ সিদ্ধদেহ অভিমান ।
পরাজিয়া জড়দেহ হবে অধিষ্ঠান ॥৯৫॥ 77
(হরিনামচিন্তামণি 15.95)
তখন স্মরণে ব্রজে বাস হবে জানি
ভাব রূপ স্মরণের সম্ভব তখনি ।78
ভাবাপন স্ব স্বরূপে হেরি ব্রজবন
যূথেশ্বরী গণে তবে হইব আচম্বিতে ।79
কাকূতি করিয়া আমি পড়িব চরণে
মাগিব চরণাশ্রয় অকপট মনে ।80
যূথেশ্বরী শ্রীললিতা কৃপাবলোকনে
তুলিয়া আমাকে লবে আপন চরণে ।81
অনঙ্গ মঞ্জরী করে আমা সমর্পিয়া
বলিবে করহ কৃপা শ্রীচরণ দিয়া ।82
অনঙ্গ শ্রীরূপ আর কমল মঞ্জরী
সেবা শিক্ষা সব দিবে বহু কৃপা করি ।83
কভু তাঁহাদের কৃপা হইলে প্রবল
পাইব শ্রীরাধাপদ সখীর সম্বল ।84
এবম্ভূত সিদ্ধ দেহে নিত্য সেবা কালে
গৌর রস ব্রজ রস মিলিবে রসালে ।85
দুই সিদ্ধ লীলা তবে অভেদ ভাবেতে
প্রকাশ হইয়া শীঘ্র আমাকে মাতাবে ।86
গুরু যূথেশ্বরী কৃষ্ণ গৌরাঙ্গ স্বরূপ
রসরাজ মহাভাব দুহুঁ এক রূপ ।87
বাহ্য দেহে রবে মাত্র শ্রবণকীর্ত্তন
শ্রীমূর্ত্তি দর্শন ভক্তি শাস্ত্র আলোচন ।88
হরিতিথি সুপালন তুলসী সেবন
রূপানুগা জন সেবা ধাম নিবসন ।89
বাহ্য দেহ যাত্রা অভিমান শূন্য সদা
অন্তরেতে গোপী দেহ নির্বৃতি সর্ব্বদা ॥90
অথ ভক্তিসম্পত্তি দশা
আপনে স্বরূপসিদ্ধি লভে ভাগ্যবান্ ।
লিঙ্গভঙ্গে বস্তুসিদ্ধি সম্পত্তি বিধান ॥৯৭॥ 91
(হরিনামচিন্তামণি 15.97)
বস্তু সিদ্ধি গোপী দেহে জড় গন্ধ হীন
ভাবাপনে সুভজনে হইয়া প্রবীন । 92
নিত্য প্রিয়া গণ সহ সালোক্য লভিব
যূথেশ্বরী আনুগত্যে যুগলে ভজিব ।93
মহাভাবাবধি ভাব ভজনের সীমা
ব্রহ্মা শিব নাহি জানে সে ভাব মহিমা ।94
নিত্য প্রিয়া গণের যে ভাব সুবিমল
সেই মত হয়ে তবে ভজিব যুগল ।95
হইয়া সাধনসিদ্ধা নিত্যসিদ্ধা সহ ।
সমতা লভিয়া কৃষ্ণসেবে অহরহঃ ॥৯৮॥ 96
সেবাভঙ্গ আর তার কভু নাহি হবে ।
পরম উজ্জ্বল রসে সদা হিয়া রবে ॥৯৯॥ 97
(হরিনামচিন্তামণি 15.98-99)
এই স্থলে আছে এক তত্ত্ব পুরাতন
সাধন কালের আশা হয়ত পূরণ ।98
সাধন সময়ে যার গৌরে দৃঢ় মতি
আপন দশাতে গৌর রসে মাতি অতি ।99
শ্রীভাব সম্পত্তি কালে নিত্য গৌর ধামে
লভে শ্রীপার্ষদ দেহ গৌর সেবা কামে ।100
কৃষ্ণে গৌরে রতি যার সম সুনির্মল
সম্পত্তি সময়ে দুই হয়ত প্রবল ।101
দুইত স্বরূপ সেই দুই নিত্য ধাম
অনুরূপ সেবা করে নিত্য যামে যাম ।102
অত এব সর্ব্বদাই ইহা জানি রব
ভকতিবিনোদ শিক্ষা গৌর কৃষ্ণে পাব ।103
আমিত উজ্জ্বল রসে স্বভাবত ব্রতী
আপনে আমার গৌর রসরাজ মূর্ত্তি ।104
ব্রজরস মাত্র মম সম্পত্তি সময়ে
একান্তে যুগল সেবা সিদ্ধ গোপী হয়ে ।105
অথোপসংহার
বৈধ রাগানুগা দুই সাধন প্রকার
শ্রীরূপ শিক্ষায় জীবে পরম উদার ।106
যে জীবের শ্রদ্ধা ক্রমে গুরু পদাশ্রয়
তাহা হৈতে নববিধ সাধন উদয় ।107
সাধন বলেতে যত অনর্থোপগমে
নিষ্ঠা রুচ্যাসক্তি ভাব হয় ক্রমে ক্রমে ।108
তাহার সাধন ভক্তি বৈধী অনুগত
ব্রজ লীলা কথা রুচি জন্মে যার স্বতঃ ।109
সেই ভাগ্যবান্ করি গুরু পদাশ্রয়
গোপীভাব স্মৃতিযোগে সাধন করয় ।110
অনর্থ নিবৃত্তি যোগে ভাবের আপন
লিঙ্গ ভঙ্গে সিদ্ধি লভে রাগানুগা জন ।111
বৈধ আর রাগানুগা ভক্ত দুই জন
ভাবাপন কালে এক শ্রেণীতে গণন ।112
সেই ভাব রতি রূপ সামগ্রী সহিত
পুষ্টা হয়ে রস রূপ লভে এই রীত ।113
রাগানুগা শীঘ্র ভাবাপন দশা পায়
রাগানুগা সাধকের শ্রেষ্ঠতা তাহায় ।114
যে সময়ে জীব অরে গুরু পদাশ্রয়
শিষ্য অধিকার গুরু করিবে নির্ণয় ।115
শ্রদ্ধা পর জনে দিবে বৈধাঙ্গ সাধন
রুচি পরে রাগানুগা পথের অর্পণ ।116
বিপর্য্যয়ে সাধক্রেঅ ফল নাহি হয়
অত এব অধিকার অগ্রেতে নির্ণয় ।117
আর এক গূঢ় কথা আছে এই স্থলে
ভাবাপনে ভজন নৈপুণ্য বলি বলে ।118
ক্ষণ পর্য্যন্ত হয় সাধন নির্ণয়
ভাবাপনে স্মরণের স্বরূপ লভয় ।119
ভজনের ফলরস প্রাপ্তি সংঘটন
লিঙ্গ ভঙ্গে সে রসের সম্পত্তি অর্জ্জন ।120
শ্রীগুরু প্রসাদ আর সাধ সঙ্গ বলে
সাধন সময়ে সিদ্ধি আসে করতলে ।121
অসদ্বার্ত্তা মুক্তি কথা বৈকুণ্ঠ পিপাসা
কাম আদি মৎসরতা মিথ্যাচার হিংসা ।122
কুটিনাটি প্রতিষ্ঠাশা জড়তা শঠতা
অনর্থ পটলী আর অভিমানাশ্রিতা, 123
স্মরণ সময়ে সাধু গুরু কৃপা বলে
ছাড়িবে সাধক সব সাধন কৌশলে ।124
এই সব দুষ্ট ভাবে না দিব আশ্রয়
স্মরি একাদশ ভাব কৃষ্ণলীলাময় ।125
কাকুতি করিয়া গুরু শ্রীকৃষ্ণ বৈষ্ণবে
অনর্থ ছাড়িতে শক্তি মাগিবে গৌরবে ।126
যত যত সে অনর্থ হইবে বিগত
তত তত ভাবাপন হবে অবিরত ।127
সম্পূর্ণ অনর্থ গতে পূর্ণ ভাবাপন
ঘটিবে অবশ্য মম স্বরূপ লিখন ।128
নিতাই জাহ্নবা পদ ছায়া যারে দিল
স্বনিয়ম সেই ভক্তিবিনোদ রচিল ।129
শেষ কথা
ভকতিবিনোদ প্রভু হইয়া সদয়
ইথে কৃপা যা করিল পূর্ণ কৃপাময় ।130
তাহা যবে শিষ্য লভ্য হইল সহজে
তার তরে শেষ কথা যাহে ভক্ত মজে ।131
এখন বলিব হেথা গুরু সহ রহি
তাহাতে ভজন বৃদ্ধি আমারিত কহি ।132
ললিতা প্রসাদ মূঢ় কিছু নাহি জানে
গুরু যা বলান তাহা মনে প্রাণে মানে ।133
গুরু পরম্পরা সিদ্ধ ভজন প্রণালী
গুরু কৃপা পেয়ে শিষ্য হয় বলশালী ।134
হৃদয় বিশুদ্ধ করি যে ভজন করে
তাহে যা অনন্ত সুখ সে বুঝিতে পারে ।135
এইত নিগূঢ় তত্ত্ব হৃদয়ের ধন
যথা তথা নাহি হয় এর প্রকাশন ।136
জড় বুদ্ধে মায়াশ্রিতে দেহী জীবগণ
ইহা বুঝিবারে নহে সক্ষম কখন ।137
নিজ আত্মা গুরু আত্মা সংযোগ করিলে
গুরুর ভাবেই ভাব নিজ মিশাইলে, 138
তন্ময় ও তন্মনস্ক হইয়া তখন
ভজনের সূক্ষ্ম ধারা যাহা প্রয়োজন, 139
লভিবারে শক্তি পায় এই কথা সত্য
বিশ্বাস করিয়া ভজি, না ভজি অনিত্য । 140
অনন্য শরণাপত্তে যে স্মরণ লয়
তাহাতে জানিবে সত্য ফলোদয় হয় ।141
একাগ্রতা ঐকান্তিক ভাব মনে ধরি
নিষ্কপটে দম্ভ ছাড়ি নামাশ্রয় করি ।142
দীন অকিঞ্চন ভাব যবে নাহি হয়
উন্নতির আশা তাহে সদা ঘুচে যায় ।143
হৃদি খুলি গুরুপদে লইয়া শরণ
গুরু পরম্পরা ধরি ধরিয়া স্মরণ ।144
ভাবাপনে স্থিত হয়ে থাকি সর্ব্ব ক্ষণ
উলূক চুলূক ভাব সদা করিয়া বর্জ্জন ।145
ইতি উতি মনকেই করিয়া মর্দ্দন
দেহান্তে সুসিদ্ধাবস্থা হয় সংঘটন ।146
ব্রজে বাস সুস্বচ্ছন্দ্যে হয় সেই ক্ষণ
অষ্টকাল নিত্যলীলা মধ্যে সুমগন ।147
অতি স্বল্পে সূক্ষ্মে ভাবে ভজন প্রণালী
ব্যকত হইল হেথা শুদ্ধ পথে চলি ।148
পুনরায় বলি এবে সাবধান হয়ে
অনুসরি রব সদা আনন্দেই রয়ে ।149
আপন ভজন কথা যেখানে সেখানে
প্রকাশ ন করি রব আপনার মনে ।150
মহাজন শিক্ষা ইহা ভুল নাহি করি
নচেৎ ভজন মোর নিরন্তরে ধরি ।151
যোগ্য স্থানে যোগ্য পাত্রে ভজনানুরাগী
সাধু বৃত্তি যেবা ধরে না হইয়া ভোগী ।152
আর শ্রদ্ধাপর হয়ে যদি কেহ যাচে
তবে এই সব বলি তাহাকেই বেছে ।153
এই শিক্ষা গুলি হয় ভজনের সার
অষ্টকাল সেবা ব্রতে স্বভাব ইহার ।154
এবে গুরু পদে রহি নিজ সেবা ধরি
রাধারাণী দাস্যে রহি আত্মভাব বরি ।155
তাহাতে অবশ্য সিদ্ধি হইবে আমার
ইহাতে সংশয় নাই এই কথা সার ।156
ললিতাপ্রসাদ সদা সুবিশ্বাস করি
কমল মঞ্জরী পদে রহে রুচি ধরি ।157
ভকতিবিনোদ প্রভু নিত্যধাম হতে
এ মানব দেহে আসি সঙ্গত সংযতে ।158
অনাদি কালের যেই সম্বন্ধ আমার
তাহা ধরিবারে আসি প্রকাশ তাঁহার ।159
আমার আমিত্ব বলি কিছু নাহি আছে
আমার অস্তিত্ব বুঝি রহি তাঁর কাছে ।160
*সমাপ্ত*
গুরুপদে নিবেদন
ওহে গুরুদেব তুমি মোরে দয়া করি
আমার হৃদয়ে চিদানন্দ দিলে ধরি ।161
আত্মশুদ্ধি লাগি হেথা তব শিক্ষাগুলি
আত্মার অপূর্ব্ব তত্ত্ব মনে হৃদে বলি ।162
সিদ্ধ শুদ্ধ ভক্ত মাঝে গুরু ধারা ধরি
সৎ চিৎ আনন্দ ভাবে সুভজন করি ।163
সেই ধারা ছেড়ে আমি কভু নাহি রব
আমার ভজন সিদ্ধ আমিত করিব ।164
প্রীতি সূত্র বাঁধি সেই গুরু ধারা চাই
সেই সূত্র হৃদে প্রাণে ধরিব সদাই ।165
সেই সূত্রে যত ভাব আর সেবা হয়
সে সেবাতে আর যাহা প্রয়োজন রয় ।166
সকলি আমার হৃদে গ্রথিত করিব
চিদানন্দে পরানন্দে নিজেকে ধরিব ।167
গুরুদত্ত একাদশ ভাব যাহা হয়
সকলি আমাতে যাহে প্রস্ফুটিত রয় ।168
মরণে জীবনে তাহে তাহা না ছাড়িব
আমার সে নিজ বস্তু বুঝি সদা লব ।169
একাদশ ভাব মোর গুরু কাছে পেযে
তার সহ পঞ্চ দশা তুলিব ফুটায়ে ।170
আমার গুরুর গুরু আত্মা বস্তু হন
প্রীতি সূত্রে আত্মা বস্তু প্রসারিত রন ।171
আত্মা বস্তু ভিন্ন তারা অন্য নাহি জানি
আত্মা মাত্র গোপী ভাবাপন হন মানি ।172
সেই গোপী ভাবাপনে ধরি মম মন
তাহে মম মনোরথ স্ফূর্ত্তি অনুক্ষণ ॥১॥ 173
জড় দেহকেই আত্মা কভু না বলিব
জড় দেহ বিনশ্বর সদা বুঝি রব । 174
আত্মা দ্বারা সিদ্ধি লাভ আত্মা সিদ্ধ বিন্দু
আত্মা বুদ্ধি শূন্য জীব ভুগে ভব সিন্ধু ।175
মায়িক আনন্দে কভু আনন্দ না রয়
মায়া জড় বস্তু কভু গুরু নাহি হয় । 176
যুগলের প্রীতি তবে জীব বিদ্যমান
সে কথা ভুলিয় জীব হাবুডুবু খান । 177
মায়াগ্রস্ত হয়ে জীব জড়ে মত্ত রয়
নশ্বর অবস্থা পেয়ে চিদ্ ভুলে যায় ।178
জড় দেহ তত্ত্বে অজে তাহে যেই জন
নশ্বরত্বে মরে বাঁচে তার ক্ষুদ্র মন ।179
তাহে তার দেহে মনে কত কষ্ট হয়
তাপ রিপু ঊর্মি আদিতেই ভুগে রয় ।180
দেহে আত্মবুদ্ধি আমি কভু না করিব
দেহ নাচাইয়া আমি কভু না ভজিব ॥২॥ 181
নাম আর কৃষ্ণে কোন ভেদ নাহি জানি
বাহ্যেন্দ্রিয়ে গ্রাহ্য নহে ওই নাম মানি । 182
আত্মএন্দ্রিয়ে প্রীতি যাহা তার নাম কাম
বাহ্যেন্দ্রিয়ে বাহ্য কাম্য হেয় পরিণাম ।183
বাহ্যেন্দ্রিয়ে প্রেম নাম কভু সত্য নয়
অপ্রাকৃত প্রেম বস্তু বাহ্যে ভুল হয় ।184
জড়ে আর চিদে কভু এক ধর্ম্ম নয়
উপাদেয ইপরীত হেয় ভবে হয় ।185
কাম আর প্রেম কভু মায়া জড়ে ভিন্ন
কিন্তু ওই দুই চিদে সর্ব্বথা অভিন্ন ।186
সত্য সত্য ত্যাগ ভাব যার নাহি আছে
সেত গুরু বলি গ্রাহ্য নহে মোর কাছে ।187
মন্ত্রৌষধি আর পথ্য সাধন ভজন
মায়া জড় কলিকেই করে নিরসন ।188
কৃষ্ণ বই রক্ষা কর্ত্তা আর কেহ নয়
গোবিন্দ পালিছে মোরে জেনেছি নিশ্চয় ।189
গোপীজনবল্লভের পদে রাখি মন
চিৎ প্রকৃতি সহ করি আত্ম নিবেদন ।190
সকলি গোবিন্দ পদে সমর্পণ করি
নাম সংকীর্ত্তনে সদা বলি হরি হরি ।191
অনাচার অপরাধ ত্যজি মনে প্রাণে
হরিণামে ওই দুই সর্ব্বনাশ আনে ॥৩॥ 192
ভকতিবিনোদ কৃত শরণাগতিতে
অপূর্ব্ব অদ্ভুত শিক্ষা লভি হৃদে চিত্তে ।193
তাহাইত অষ্টাদশাক্ষর মন্ত্র জানি
কৃষ্ণই গোবিন্দ হয়ে রাখে পালে মানি । 194
সম্বন্ধ অভিধেয় প্রয়োজন তত্ত্ব
মোর মনে উদিয়াই মোরে করে মত্ত । 195
গুরু পদে নিবেদন
গায়ত্রী উচ্চারণে এই তত্ত্ব তিন ।
ফুটি উঠে মোর মনে হয়ে সমীচীন ॥196॥
তাহে যে অনঙ্গ বস্তু অতীব সুন্দর ।
প্রেম ময় আত্মারিত সদা সুখকর ॥ 197॥
মঞ্জরীর ভাবে তাহে আমাকেই জানি
আত্মতত্ত্ব ব্যতিরেকে কিছুই না মানি ॥198॥
অনাসক্তে থাকি শুদ্ধ ভক্তি লাভ করা ।
গুরু পরম্পরা শিক্ষা অতি মনোহরা ॥199॥
ওহে গুরু তব শিক্ষা আর কি বলিব ।
তব কৃপা বিনা আমি কিছু না বুঝিব ॥200॥
এবে নিজ গুণে অহৈতুকী দয়া করি ।
তব পদে রাখি মোরে শিখায়ে চাতুরী ॥201॥
অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আমাকে রাখিয়া ।
যুগল সেবাতে লও আমাকে ধরিয়া ॥202॥
আমি অতি নরাধম কিছুই না জানি ।
তব কৃপা সুসম্বল সদা মোর মানি ॥203॥
॥ সমাপ্তোঽযং গ্রন্থঃ ॥ শ্রীগুরবে নমঃ ॥
Comments
- Your grateful reader Muraliswara das
You will have to forgive me. I do not have the time for the moment to translate this. But I suggest reading Chapter 15 of the Harinama-chintamani for a general understanding of what Prabhu was writing about.
Jai Radhe. Jagat
Sincerely,
M.d.